প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্কার-সংরক্ষণে মূল অবকাঠামো ও অবয়ব বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট স্থপতি, প্রত্নতত্ত্ববিদ ও সংরক্ষণ প্রকৌশলীদের আহবান জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। তিনি বলেন, সংস্কার-সংরক্ষণ কাজে যাতে মূল অবকাঠামোর কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী আজ দুপুরে রাজধানীর লালবাগ দুর্গের সেমিনার হলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর আয়োজিত ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন লালবাগ দুর্গস্থ হাম্মামখানার সংস্কার-সংরক্ষণ কার্যক্রম বিষয়ক পর্যালোচনা ও অংশীজন সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রতন চন্দ্র পন্ডিত এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর।
লালবাগ দুর্গস্থ হাম্মামখানার সংস্থার-সংরক্ষণ বিষয়ে উপস্থাপনা করেন প্রকল্পটির পরামর্শক বিশিষ্ট স্থপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমেদ। বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান করেন প্রকল্পের পরামর্শক অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজ এবং প্রকল্পের শ্রীলঙ্কান পরামর্শক Dr. TMJ Nilan Cooray।
প্রধান অতিথি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানে সাংস্কৃতিক সম্পদ ও বৈচিত্র্য রক্ষায় ম্যান্ডেট অন্তর্ভুক্ত করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দেশের সাংস্কৃতিক সুরক্ষায় যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করেছে এবং বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
বিশেষ অতিথি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর বলেন, অতীত থেকে বর্তমান সূত্রের রেশ টানা এবং ভবিষ্যতের জন্য নির্দেশনা দেয়া- এটাই প্রত্নতত্ত্বের মূল তত্ত্ব। তিনি বলেন, হাম্মামখানাসহ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা সংস্কার-সংরক্ষণ কাজের অভিজ্ঞতা থেকে সংশ্লিষ্ট স্থপতি, প্রত্নতত্ত্ববিদ ও সংরক্ষণ প্রকৌশলীগণ লাগসই বা অ্যাডাপ্টিভ প্রযুক্তি শিখতে পারে ভবিষ্যতের জন্য। সচিব বলেন, ধারণা করা হয়, মানব প্রজন্ম দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবে। তাদের আরাম-আয়েশে বেঁচে থাকার জন্য প্রযুক্তি দরকার। এ ধরনের সংস্কার-সংরক্ষণ কাজের অভিজ্ঞতা থেকে অ্যাডাপ্টিভ পদ্ধতিতে পরিবেশসম্মত উপায়ে আরো উন্নত ধারণা বা প্রযুক্তি বেরিয়ে আসবে সে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রতন চন্দ্র পণ্ডিত বলেন, লালবাগ দুর্গের হাম্মামখানাকে যথাসম্ভব আদিরূপে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। হাম্মামখানা ছাড়াও লালবাগ দুর্গের অন্যান্য স্থাপনাকেও পর্যায়ক্রমে সংস্কার-সংরক্ষণ কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে।
সভায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকবৃন্দ, প্রশাসনের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন অংশীজন, জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসী, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরসহ অন্যান্য বিভাগ ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। প্রতিমন্ত্রী এর আগে লালবাগ দুর্গস্থ হাম্মামখানার সংস্কার-সংরক্ষণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, বাংলাদেশ আয়োজিত US Ambassadors Fund for Cultural Preservation- Small Grants Competition (Fiscal Year 2020)-এ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক প্রেরিত প্রস্তাবটি অনুমোদন পায়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক প্রেরিত প্রস্তাবটি ছিল- "Restoring, Retrofitting and 3D Architectural Documentation of Historical Mughal Hammam of Lalbag Fort, Lalbag, Dhaka, Bangladesh."
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন এবং বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিকে সামনে রেখে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে লালবাগ দুর্গের হাম্মামখানার সংস্কার-সংরক্ষণের এ পরীক্ষামূলক প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত হেরিটেজ সেলের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। হেরিটেজ সেলের সদস্যবৃন্দ হলেন- ড. আমিরুজ্জামান, উপপরিচালক, খন্দকার মাহফুজ আলম, সহকারী স্থপতি এবং মোঃ খায়রুল বাসার স্বপন, ফিল্ড অফিসার।
লালবাগ কেল্লা ১৬ শতকে নির্মিত একটি অসম্পূর্ণ দূর্গ। ১৬৭৮ সালে মোঘল সুবেদার মুহাম্মদ আযম শাহ এই দূর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। লালবাগ কেল্লায় একটি মসজিদ, পরিবিবির মাজার এবং হাম্মামখানা রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কতৃক ইতোপূর্বে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে ছাদ বাগান এবং পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থার প্রত্নসাক্ষ্য সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। ১৯৯৯ সালে লালবাগ কেল্লা বাংলাদেশের অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য সম্ভাব্য তালিকায় (টেনটেটিভ লিস্ট) অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। দোতলা বিশিষ্ট হাম্মামখানা ভবনটি মোঘল সুবেদারদের দরবার হল হিসেবে ব্যবহৃত হত।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো গবেষণা ও ডকুমেন্টশনের মাধ্যমে হাম্মাম ভবনের সংস্কার পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং ইতোপূর্বে সনাক্তকৃত ক্ষতি প্রশমনের নিমিত্ত জরুরি কিছু সংস্কার-সংরক্ষণ কাজ সম্পাদন। এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত উপাদানসমূহ নিম্নরূপঃ
প্রকল্পটির নির্ধারিত ছিল সময়সীমা অক্টোবর ২০২০ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২২। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজটি শুরু হতে দেরি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প সমাপ্ত হওয়া চ্যালেঞ্জ থাকায় আগামী মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত নির্ধারিত বাজেটের মধ্যেই সময়সীমা বর্ধিত করা হয়েছে।